Home ভয়ংকর সৌরঝড়ে বিকল হতে পারে বিশ্বের ইন্টারনেট সংযোগ
ভয়ংকর সৌরঝড়ে বিকল হতে পারে বিশ্বের ইন্টারনেট সংযোগ। সাবমেরিন কেব্ল নষ্ট হতে পারে, অকেজো হতে পারে যোগাযোগের স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহগুলো। গবেষণাপত্র প্রকাশ করে বিষয়টি আলোচনায় আনেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কম্পিউটার বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক সংগীতা আবদু জ্যোতি। সম্প্রতি অনলাইনে অনুষ্ঠিত ‘এসিএম সিগকম ২০২১’ সম্মেলনে গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন তিনি।
বিস্তারিত জানতে ই-মেইলে যোগাযোগ করেছিলাম সংগীতার সঙ্গে। জানালেন, এমন সৌরঝড়ে বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা কম। কেন কম, তা জানার আগে চলুন সৌরঝড় সম্পর্কে দুটি কথা জেনে নেওয়া যাক।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সৌরঝড়কে বলেন ‘করোনাল মাস ইজেকশন’। এমন ঘটনায় সূর্য থেকে তীব্র চৌম্বকীয় কণার নিঃসরণ হয়। এই কণাগুলো ঘণ্টায় কয়েক মিলিয়ন কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। এভাবে ১৩ ঘণ্টা থেকে ৫ দিনের মধ্যে এসে পৌঁছায় পৃথিবীতে।
সৌরঝড় মানুষের ক্ষতি করে বলে প্রমাণ মেলেনি। সূর্য থেকে ছুটে আসা ওই কণাগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে যায়। তবে ক্ষতি করতে পারে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের। পাশাপাশি তীব্র বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহিত করে মানুষের তৈরি অবকাঠামোগুলোর ক্ষতি করতে পারে।
১৮৫৯ সালের এক সৌরঝড় প্রায় ১৭ ঘণ্টায় পৃথিবীতে পৌঁছেছিল। সে সময় টেলিগ্রাফ নেটওয়ার্কের ক্ষতি করেছিল। বৈদ্যুতিক শক অনুভূত হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন টেলিগ্রাফ অপারেটররা। ১৯২১ সালের আরেক সৌরঝড় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের টেলিগ্রাফ সংযোগ এবং রেলপথের ক্ষতি করেছিল। ১৯৮৯ সালে তুলনামূলক কম শক্তির আরেক ঝড়ে কানাডার কেবেকের বিদ্যুতের গ্রিড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
শুরুতে যেমনটা বলা হয়েছে, দীর্ঘ সাবমেরিন কেব্ল বিচ্ছিন্ন হলে তার প্রভাব পড়বে ইন্টারনেট সংযোগে। আর যোগাযোগের স্যাটেলাইটগুলো কাজ করা বন্ধ করে দিলে মুঠোফোনে যোগাযোগও সম্ভব হবে না, মুঠোফোনে ইন্টারনেট সংযোগও কাজ করবে না। তবে এমন অবস্থার মুখোমুখি আমরা এত দিন হইনি। কারণ, ইন্টারনেট কিংবা সার্বিকভাবে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ হয়েছে গত তিন দশকের মধ্যে। এই সময়ে সূর্য তেমন সক্রিয় ছিল না। ফলে বড়সড় কোনো সৌরঝড়ের প্রভাব ইন্টারনেট-যোগাযোগে পড়েনি। তবে সংগীতা জানিয়েছেন, বেশি ও কম সক্রিয়তার চক্রের মধ্য দিয়ে যায় সূর্য, আর শিগগিরই সে চক্রের চূড়ায় পৌঁছাবে। অর্থাৎ আমাদের জীবদ্দশায় শক্তিশালী একটি সৌরঝড়ের কবলে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
অরোরা যে মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি দেখা যায়, সেটাও এ কারণেই।
সৌরঝড়ে এশিয়ার দেশগুলো তুলনামূলক নিরাপদ বলে উল্লেখ করেন সংগীতা আবদু জ্যোতি। তাঁর ভাষায়, নিম্ন অক্ষাংশের দেশগুলোর ঝুঁকি অনেক কম। তবে সেটা নিশ্চিত করে বলার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।
বাংলাপিডিয়ায় বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে ২০°৩৪' উত্তর থেকে ২৬°৩৮' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০১' পূর্ব থেকে ৯২°৪১' পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। বিষুবরেখার ৩০ ডিগ্রি ওপর থেকে ৩০ ডিগ্রি নিচে পর্যন্ত নিম্ন অক্ষাংশ ধরা হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের অবস্থান নিম্ন অক্ষাংশে।
সেদিক থেকে সৌরঝড়ের প্রভাব বাংলাদেশেও কম পড়ার কথা। সেটা কেন, তা-ই জানতে চেয়েছিলাম সংগীতার কাছে। উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্রের অবস্থানের কারণে উচ্চ অক্ষাংশের অঞ্চলগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। আর চৌম্বকীয় মেরুর অবস্থান পৃথিবীর মেরুগুলোর কাছাকাছি। সৌরঝড়ে ক্ষতি হয় মূলত পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্রের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ার প্রভাবেই। সে কারণেই সৌরঝড়ে পৃথিবীর চৌম্বকীয় মেরুর কাছাকাছি অঞ্চলগুলোর ক্ষতির ঝুঁকি বেশি। অরোরা (মেরুপ্রভা) যে মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি দেখা যায়, সেটাও এ কারণেই।’
Asif Khan
Leave_a_Comment
You are not logged in. Click here to login